মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৯

নামজারি বা মিউটেশন কি? নামজারি কিভাবে করতে হয়?

মিউটেশন ইংরেজী শব্দ যার বাংলা অর্থ নামজারি  বা পরিবর্তন।  এখানে খতিয়ানে পরিবর্তিত লিপিবদ্ধ করা। ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যনুয়াল ১৯৯০ এর ২০ অনুচ্ছেদ বলে নামজারির দায়িত্ব সহকারী ভূমি কমিশনারের উপর ন্যস্ত।

নামজারির কারণ:

  • রেজিস্ট্রি দলিলগুলো হস্তান্তরের কারণে;
  • ভূমি মালিকের প্রয়াত বা মৃত্যুর কারনণে;
  • সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে নামজারী;
  • কবলা উপহার এবং উইলের ক্ষেত্রে নামজারি;
  • দানের ক্ষেত্রে নামজারি;
  • সরকার কর্তৃক খাস জমি বন্দোবস্তের কারণে;
  • খাস খতিয়ান ভূক্তকরণের ফলে নামজারি;
  • এল এ কেসর আওতায় নামজারি;
  • স্বত্ব মামলায় রায় ডিক্রি মূলে নামজারি;
  • খাজনা অনাদয়ের কারণে জমি বিক্রয় ও সংশ্লিষ্ট নামজারী;
  • নদী সিকস্থির কারণে খাজনা মওকুফ করার কারণে;
  • সার্টিফিকেট মামলা আদালতে মামলার মাধ্যমে কোন জমি নিলাম খরিদ হলে স্বত্বাধিকার ঘোষিত হলে নামজারি করা হয়।
  • অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন মামলার আশংকা থাকার কারণে নামজারি।
     আসুন জেনে নে নামজারি কত প্রকারের হয়

  1. উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারি: কোন হোল্ডিং-এর মালিকের মারা যাবার পর তার উত্তরাধিকারীগণ নিজেদের নাম ঐ হোল্ডিং ভূক্ত করার আবেদন করেন। সহকারী কমিশনারের অফিস হতে উক্ত জমির উপর তহসিলদারের প্রতিবেদনে চেয়ে পাঠান। তহসিলদার প্রতিবেদন পাঠানোর পর যথার্থ শুনানির পর কাগজপত্র যাচাই করে নামজারির আবেদন  দিবেন। এক্ষেত্রে নতুন কোন হোল্ডিং খোলার প্রয়োজন নেই। মৃত ব্যক্তির নাম কেটে ফরায়েজ অনুযায়ী হিস্যা বন্টন করে উত্তরাধিকারীদের নাম পূর্বের হোল্ডিং ভূক্ত করবেন।
  2. রেজিস্টার দলিল মূলে নামজারি: দলিল রেজিস্ট্রির পর রেজিস্ট্রি আফিস হতে হস্তাস্তরিত নোটিশ সহকারী কমিশন (ভূমি) অফিসে প্রেরণ করেন। এই নোটিশকে এলটি নোটিশ বলে। উক্ত নোটিশ পাবার পর সহকারী কমিশন তার অফিসে একটি নামজারি কেস খোলেন । এর তদন্তের ভার তহসিলদারকে অর্পণ করে তার অফিসে পাঠান। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরেজমিন রেকর্ড যাচাই করে, ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল এর পরিশিষ্ট-১৩ অনুসারে ফরম নং ১০৭৮ এ প্রতিবেদন দিবেন।
  3. আদালতের ডিক্রি প্রাপ্তিমূলে নামজারি: আদালতের ডিক্রি মূলে সরকারী খাস জমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নামজারী করা যায়। আদালত হতে ডিক্রি প্রাপ্তির পর উক্ত জমি পুনরায় রেজিস্ট্রির প্রয়োজন হয় না। তবে এরূপ ডিক্রি মূলে প্রাপ্ত খাস জমির নামজারির আবেদন পাওয়া গেলে একটি নামজারি মামলা ফাইল করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মতামতের জন্য কালেক্টরের নিকট প্রেরণ করতে হবে। এ ডিক্রি একতরফা কিংবা দূতরফা সূত্রে প্রাপ্ত হলেও মতামতের জন্য কালেক্টরের নিকট পাঠাতে হবে। কালেক্টরেট বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এরকম প্রস্তাব পাবার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক এর বিধান মতে উক্ত ডিক্রিদারদের জন্য দেওয়ানী আদালতে বিবিধ কেস/আপীল/ফ্রেসস্যুট দায়ের করার ব্যবস্থা করবেন।
  4. অধিগ্রহণকৃত জমির নামজারি: কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জমি অধিগ্রহণ করলে নামজারীর জন্য তারাই আবেদন করবেন। যদি না করেন কালেক্টরের এল এ শাখা হতে অধিগ্রগ্রহণ এল এ কেসের নম্বর ও তফসিল ও তফসিল সংগ্রহ করে ঐ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে নিজ নামে হোল্ডিং খোলার জন্য নোটিশ দিতে হবে। এল এ শাখার ও দায়িত্ব এল এ কেসের নম্বরসহ অধিগ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য সরকারী কমিশনার (ভূমি)র অফিসে পাঠিয়ে দেয়া। যাতে করে সংস্থা হোল্ডিং খুলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে পারেন।
  5. সার্টিফিকেট মূলে নামজারি: সার্টিফিকেট মূলে কোন স্থাবর সম্পত্তির নিলাম ক্রেতা নামজারির জন্য আবেদন করবেন। নিলামের বায়নানামা ও দখলনামার ভিত্তিতে নামজারি করা যাবে। যদি নিলাম ক্রেতা সরকার হয় তাহলে ১ ও ২ নং রেজিস্টার সংশোধন করতে হবে এবং ৩ নং রেজিস্টারের ৩য় খন্ড সংশোধন করতে হবে।
আসুন জেনে নেই নামজারির জন্য আবেদনকরীর করণীয়
জমি কেনার পর ক্রেতার সর্বপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল ক্রয়কৃত জমি নিজ নিজ নামে নামজারি করে রেকর্ড সংশোধন করা। এর জন্য আবেদনকারীর করণীয় হলঃ
  • কোর্ট ফি দিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি)র বরাবরে আবেদন করা।
  • আবেদনের সাথে জমির মালিকানা সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংযোজন করে দিতে হবে।
  • নামজারির জন্য কমপক্ষে ৪৫ দিন সময় হাতে নিয়ে আবেদন করা।
  • সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক নামজারির উপর শুনানীর সময় নিজ নামে হোল্ডিং নম্বর জেনে নেয়া। জমির মূল কাগজপত্র নিয়ে হাজির হওয়া এবং শুনানীতে অংশগ্রহণ করা।
  • আবেদন মঞ্জর হলে ডিসিআর এবং সংশোধিত খতিয়ান সংগ্রহ করা ২ নং রেজিস্টারে নিজ নামে হোল্ডিং জেনে নেয়া।
নামজারির আবেদন পত্রের নমুনা

ই সম্পের্কে আরও জানার থাকলে মন্তব্য করবেন। শেষে একটা কথা বলি আমদের দ্বারা আপনি উপকৃত হচ্ছন কি না তাও অবশ্যই জানাবেন।

1 টি মন্তব্য: