বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯

মোক্তারনামা বা পাওয়ার অব এটর্নী যেভাবে করবেন

মোক্তারনামা:
স্ট্যাম্প এ্যাক্ট ১৮৯৯ এর ২(২১) উপধারা অনুসারে যে দলিল দিয়ে কোন ব্যাক্তিকে অপর কোন ব্যক্তির পক্ষে কোন কার্য বা কোন ডিক্রি/রেজিস্ট্রি সম্পাদন/তত্ত্বাবধান ইত্যাদি কার্যাবলি সম্পাদন করার ক্ষমতা দেয়া হয় তাকে আমমোক্তারনামা বা পাওয়ার অব এটর্নী বলে। সাধারণত স্থাবর সম্পত্তি, জমি, বাড়ি, দোকান ইত্যাদি দান, বিক্রয়, হস্তান্তর রক্ষণাবেক্ষণ, বন্ধক রাখা ঋণ গ্রহণ, খাজনা প্রদান ইত্যাদি কাজে মোক্তার নিয়োগ করা হয়। অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়েও মোক্তারনামা করা যায়।

চলুন জেনে নেই মোক্তারনামা বা পাওয়ার অব এটর্নী কত প্রকার হয়
  1. জেনারেল পাওয়ার অব এটর্নী: যে মোক্তারনামায় মোক্তারদাতার পক্ষে জমি ক্রয়-বিক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ, চুক্তি সম্পাদন, মামলা পরিচালনা করাসহ যাবতীয় কাজের ক্ষমতা মোক্তারকে দেয়া হয় তাকে বলে জেনারেল পাওয়ার অব এটর্নী।
  2. স্পেশাল পাওয়ার অব এটর্নী: একটি মাত্র নির্দিষ্ট বা কোন বিশেষ কাজের ক্ষমতা মোক্তারকে দিয়ে তৈরি মোক্তারনামাকে বলে স্পেশাল পাওয়ার অক এটর্নী।
মোক্তারনামার শর্তাবলী:
  • মোক্তারনামা নোটারী পাবলিক/ম্যাজিস্ট্রেট/বিদেশে সম্পাদিত হলে তা দূতাবাসের প্রতিনিধির সম্মুখে সম্পাদন করতে হবে ও তসদিক/সত্যায়ন করতে হবে।
  • মোক্তারনামা লিখিত দলিল হতে হবে।
  • মোক্তারনাম যথাযথ স্টাম্পযুক্ত হতে হবে।
  • মোক্তারনামা দাতা কর্তৃক মোক্তারকে ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
মোক্তানামা রেজিস্ট্রিকরণ:
  1. মোক্তারদাতা তার পক্ষে কাউকে রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩২ধারা মতে দলিল সম্পাদন ও দাখিল করার জন্য মোক্তার নিযুক্ত করে যে মোক্তারনামা তৈরি করেন তা অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে (রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩ ধারা)।
  2. মোক্তারনামা দাতার সম্পত্তি যেখানেই থাকুক দাতা যেখানে বসবাস করেন সে জেলার রেজিস্টার বা সাব-রেজিস্টারের সম্মুখে মোক্তারনামা সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করতে হবে।
  3. মোক্তারনামা সম্পাদন কালে দাদা বিদেশে বসবাসরত থাকলে তাকে নোটারী পাবলিক. আদালতের বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট বা বংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির সম্মুখে মোক্তারনামা সম্পাদন করতে হবে এবং তার দ্বারা মোক্তারনামাটি সত্যায়ন করতে হবে।
  4. দলিল দাতা দলিল নিজে সম্পাদন করে তা রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করার জন্য ক্ষমতা দিয়ে মোক্তারনামা তৈরি করলে এরূপ মোক্তারনামা শুধু তসদিক বা সত্যায়ন করলেই চলবে। এরূপ মোক্তারনামা রেজিস্ট্রি করতে হবে না।
  5. যে সকল মোক্তারনামা রেজিস্ট্রি করতে হবে তা অবশ্যই সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে হবে {(রেজিস্ট্রেশন আইন ২০০৪ এর ১৭ এর(২) ধারা}।
  6. রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩(১) ধারায় যে সকল ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রি অফিস যাওয়া হতে রেহাই দেয়া হয়েছে তারা বাড়িতে বা জেলে বসে মোক্তারনামা সম্পাদন করতে পারবে।
বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানরত কোন ব্যক্তি মোক্তারনামা করতে চাইলে তাকে রেজিষ্ট্রেশন এ্যাক্টের ৩৩(গ) ধারা মতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্বারা মোক্তারনামাটি প্রত্যয়ন করে পররাস্ট্র মন্ত্রণালয় হতে সত্যায়ন করে নিতে হবে। এরপর দলিলটি ৩ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নিকট রিস্টাম্পিং এর জন্য দাখিল করতে হবে। জেলা প্রশাসক সবকিছূ যথাযত পেলে স্ট্যাম্প এ্যাক্টের ১৮ ধারা মতে বিশেষ আঠাযুক্ত স্টাম্প লাগিয়ে তা নিয়মিত বা রিস্ট্যাম্পিং করে দিবেন। পাওয়ার দলিল সম্পাদনের ৩ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করতে না পারলে স্টাম্প এ্যাক্টের ৩৩ ধারা মতে সাধারণ ফিসের ১০ গুণ বেশী ফিস দিয়ে তা নিয়মিত করণ যাবে।


এবার আসুন মোক্তারনামা বাতিলের পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নে


  • মোক্তারনামা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য করা হলে মেয়াদ শেষে বাতিল বলে গণ্য হবে।
  • মোক্তারনামা নির্দিষ্ট কোন কার্যের জন্য করা হলে ঐ কার্য সমাপ্তিতে বাতিল হবে।
  • যৌথ ক্ষমতার মোক্তারনামা পক্ষদের একজনের মুত্যুতে বাতিল বলে গণ্য হবে।
  • মোক্তারনামা দাতা কোন মোক্তারনামা বাতিল করতে ইচ্ছুক হলে যে রেজিস্ট্রি অফিসে উহা তসদিক করা হয়েছিল সে স্থানের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বরাবরে মোক্তারনামা রদের আবেদন করতে হবে। পূর্বকৃত মোক্তারনামাটি বিনষ্ট না হয়ে থাকলে আবেদনের সঙ্গে সেটিও দাখিল করতে হবে। এতে তিনি ‘রদ’ করা হল কথাটি লিখে দিবেন এবং সে মোতাবেক রেজিস্টার সংশোধন করবেন। রেজিস্টারিং অফিসার মোক্তারনামা বাতিলের আবেদন পাবার পর তার জেলার সকল রেজিস্ট্রি অফিসে বা অন্য কোন জেলার সদর অফিসকে বিষয়টি নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন। নোটিশ জারির ডাক টিকিটের খরচ আবেদনকারী বহন করবেন।
  • স্বার্থের সাথে যুক্ত মোক্তারনামা সার্থ পূর্ণ বা পরিত্যক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাতিল করা যায় না।
এ সম্পর্কে আরও জানতে মন্তব্য করুন এবং জানান আপনি কোন বিষয় জানতে আগ্রহী। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন